ব্যাকলিংক (Backlinks)! এসইও (SEO) ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বিতর্কিত এবং রহস্যময় একটি টপিক। এই একটা শব্দ নিয়ে সবার নিজের নিজের বিশ্বাস আছে। কেউ ব্যাকলিংক কিনতে চায়, কেউ নিজে বানাতে চায়। কিছু মানুষ মনে করে ব্যাকলিংক ছাড়া র্যাঙ্কিং অসম্ভব, আবার অনেকের মতে এটা একটা পুরোনো, অকেজো কনসেপ্ট।
কিন্তু এতসব বিতর্কের মাঝে আসল সত্যিটা কী? ভবিষ্যতে কি ওয়েবসাইট র্যাঙ্ক করানোর জন্য ব্যাকলিংক বানানোর দরকার পড়বে? নাকি আমরা ইতোমধ্যেই সেই ভবিষ্যতে পৌঁছে গেছি, যেখানে ব্যাকলিংকের আর কোনো মূল্য নেই? চলুন, আজ এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
আগের দিনের কথা: যখন কিওয়ার্ডই ছিল রাজা
একটু পেছনে ফিরে যাই, ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে। তখনকার সার্চ ইঞ্জিনগুলো, যেমন Yahoo!, খুব সাধারণ একটা কনসেপ্টে কাজ করত। ধরুন, আপনি “best dentist in Dhaka” লিখে সার্চ দিলেন। সার্চ ইঞ্জিন তখন দেখত কোন ওয়েবসাইটে এই কথাগুলো সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহার করা হয়েছে। যে পেজে কিওয়ার্ডের সংখ্যা (keyword density) বেশি, সেই পেজকেই সবার উপরে দেখাতো।
কিন্তু এই সিস্টেমের একটা বড় সমস্যা ছিল। এটাকে খুব সহজেই বোকা বানানো যেত। মানুষজন তাদের ওয়েবসাইটে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো রঙে অথবা সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা রঙে শত শতবার কিওয়ার্ড লিখে রাখত। ফলে সাধারণ ইউজাররা কিছু দেখতে পেত না, কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন সেই কিওয়ার্ডগুলো পড়ত এবং পেজটিকে র্যাঙ্ক করে দিত। এতে ইউজাররা ভালো রেজাল্টের বদলে স্প্যামি ওয়েবসাইটে চলে যেত।সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের জগতে এটি কিওয়ার্ড স্টাফিং(Keyword Stuffing) নামে পরিচিত।
Google-এর বিপ্লব: জন্ম হলো ব্যাকলিংকের
এই সমস্যার একটা দুর্দান্ত সমাধান নিয়ে হাজির হলো Google। তারা কিওয়ার্ডের সংখ্যার ওপর ভরসা না করে, একটা নতুন জিনিসকে র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তি বানাল। আর সেটাই হলো ব্যাকলিংক।
তাদের কনসেপ্টটা ছিল খুব সহজ একটি ওয়েবসাইটকে অন্য যতগুলো ওয়েবসাইট থেকে লিংক দেওয়া হবে, সেই ওয়েবসাইটটি তত বেশি বিশ্বাসযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটা অনেকটা ভোটের মতো। যে যত বেশি ভোট পাবে, তার গুরুত্ব তত বেশি। এই যুগান্তকারী অ্যালগরিদমের নাম দেওয়া হয় PageRank, যা Google-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ (Larry Page)-এর নামে নামকরণ করা হয়।
ব্যাকলিংকের বিবর্তন: সিস্টেম যখন আরও স্মার্ট হলো
প্রথম দিকে যেকোনো ধরনের ব্যাকলিংকই কাজ করত। কিন্তু এসইও এক্সপার্টরা এরও অপব্যবহার শুরু করে। তখন Google তাদের সিস্টেম আরও উন্নত করে।
১. টপিকের গুরুত্ব (Topic-Sensitive PageRank): ২০০২ সাল নাগাদ Google বুঝতে পারে যে সব ব্যাকলিংকের মান সমান নয়। একটি ব্যাকলিংক কোন বিষয়ের ওয়েবসাইট থেকে আসছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, একজন ডেন্টিস্টের ওয়েবসাইটকে যদি ১০টি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে লিংক দেওয়া হয়, তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে সেই ডেন্টিস্টের ওয়েবসাইট, যাকে মাত্র দুটি মেডিকেল ওয়েবসাইট থেকে লিংক দেওয়া হয়েছে। কারণ এখানে লিংকগুলো প্রাসঙ্গিক (relevant)।
২. লিংকের পজিশন (Reasonable Surfer Model): ২০১০ সালে Google আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। তারা “Reasonable Surfer Model” নামে একটি কনসেপ্ট নিয়ে আসে। এর মূল কথা হলো, একটি পেজের সব লিংকের ওপর ইউজাররা সমানভাবে ক্লিক করে না। যেমন, একটি আর্টিকেলের মূল কন্টেন্টের ভেতরে থাকা লিংকে ক্লিক করার সম্ভাবনা অনেক বেশি, কিন্তু পেজের একেবারে নিচে ফুটারে (footer) বা সাইডবারে থাকা লিংকে ক্লিক করার সম্ভাবনা অনেক কম। তাই, কন্টেন্টের ভেতরে থাকা লিংকগুলোর ভ্যালু বেড়ে গেল এবং ফুটার বা সাইডবারের মতো জায়গার লিংকের গুরুত্ব কমে গেল।
AI-এর যুগে ব্যাকলিংকের আসল ভূমিকা কী?
এখন আমরা AI-এর যুগে আছি। Google-এর অ্যালগরিদম এখন এতটাই উন্নত যে তারা একটি পেজের কনটেন্ট পড়ে তার গুণমান এবং প্রাসঙ্গিকতা মানুষের মতোই বুঝতে পারে। তাহলে এখন ব্যাকলিংকের প্রয়োজন কোথায়?
এর উত্তর হলো, ব্যাকলিংক এখন একটি টাই-ব্রেকার (tie-breaker) হিসেবে কাজ করে।
যখন কোনো একটি সার্চ রেজাল্টের জন্য দুটি পেজের কনটেন্ট প্রায় সমান ভালো হয়, তখন Google বিভ্রান্ত হয়ে যায় যে কাকে আগে দেখাবে। ঠিক এই সময়েই Google ব্যাকলিংকের দিকে তাকায়। তখন সে দেখে, এই দুটি পেজের মধ্যে কোনটির কাছে বেশি প্রাসঙ্গিক এবং হাই-অথরিটি ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিংক আছে। যার ব্যাকলিংক প্রোফাইল বেশি শক্তিশালী, সে-ই সেই প্রতিযোগিতায় জিতে যায়।
সুতরাং, ভবিষ্যতে ব্যাকলিংকের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে না, তবে এর ভূমিকা বদলে গেছে। এখন আর হাজার হাজার লো-কোয়ালিটি ব্যাকলিংক বানিয়ে কোনো লাভ নেই। আপনার প্রথম এবং প্রধান ফোকাস হওয়া উচিত ইউজারদের জন্য সেরা কনটেন্ট তৈরি করা। আর যখন দেখবেন আপনার প্রতিযোগীদের কনটেন্টও আপনার মতোই ভালো, তখন হাই-কোয়ালিটি ব্যাকলিংকই হবে আপনার তুরুপের তাস।