বর্তমানে ব্যবসার জগতে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। আপনি হয়তো একজন উদ্যোক্তা, যিনি নিজের ব্র্যান্ডের জন্য একটি দক্ষ মার্কেটিং এজেন্সি খুঁজছেন, অথবা আপনি নিজেই একজন ফ্রিল্যান্সার বা এজেন্সি মালিক যিনি ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে যাচ্ছেন।
দুই পক্ষের ক্ষেত্রেই সঠিক পার্টনার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার ভুল পার্টনার বেছে নিলে ক্ষতিটা শুধু টাকা নয়, সময়, স্নায়ু ও ব্র্যান্ড ইমেজ সব কিছুতে পড়ে। তাই কাজ শুরুর আগেই কিছু ‘Red Flag’ লক্ষণ খেয়াল রাখা জরুরি।
🔍 যদি আপনি একজন এজেন্সি/ফ্রিল্যান্সার হন, ক্লায়েন্ট বাছার সময় এগুলো দেখবেন:
১. 🎯 “৭ দিনে রেজাল্ট চাই” অবাস্তব প্রত্যাশা
যদি কোনো ক্লায়েন্ট বলেন, “এক সপ্তাহে রেজাল্ট না পেলে কাজ বন্ধ,” তাহলে থেমে ভাবুন।
ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া এখানে Audience research, Ad testing, Optimization, Funnel refinement লাগে। SEO হলে তো সময় আরও বেশি।
অভিজ্ঞ ক্লায়েন্টরা বুঝেন যে, ভালো রেজাল্ট পেতে হলে কিছু সময় ও পর্যবেক্ষণ দরকার।
সতর্কতা: কেউ যদি বলেন “রেজাল্ট না এলে পেমেন্ট নয়”, তাহলে জেনে নিন এটা পার্টনারশিপ নয়, চাপে কাজ আদায় করার চেষ্টা।
২. 📄 ক্লায়েন্ট ইনপুট দিতে অনীহা
অনেক ক্লায়েন্ট শুরুতেই বলেন, “আপনারা সব ঠিক করে দিন, আমি সময় দিতে পারবো না।”
এটা আসলে একটা বিপজ্জনক সংকেত। একজন ক্লায়েন্ট যদি নিজের প্রোডাক্ট, মার্কেট, টার্গেট অডিয়েন্স বা অফার সম্পর্কে সঠিকভাবে ইনপুট না দেন, তাহলে আপনি যতই ভালো কাজ করুন না কেন, ফলাফল কাঙ্ক্ষিত হবে না।
আপনার কনটেন্টে যদি ভুল তথ্য থাকে, অফারে যদি দ্বিধা থাকে, বা ভিজ্যুয়াল যদি ব্র্যান্ডের সঙ্গে না মেলে—দায় যাবে আপনার ওপর।
৩. 🔄 ঘন ঘন এজেন্সি পরিবর্তন
ক্লায়েন্টদের মধ্যে কেউ কেউ আগের ৩-৪টি এজেন্সিকে দোষারোপ করে আপনাকে দায়িত্ব দেবেন।
শুনে মনে হতে পারে আপনি “Hero” হয়ে যাবেন, কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম। অনেক সময় এ ধরনের ক্লায়েন্টের মূল সমস্যা হয় অবাস্তব মাইন্ডসেট, বাজেট সংকীর্ণতা বা মাইক্রোম্যানেজমেন্ট। তারা কাজের মাঝপথে ধারণা বদলান, স্ট্র্যাটেজি ও টিমকে দোষারোপ করেন।
পরামর্শ: কাজ শুরুর আগে জেনে নিন পূর্বের এজেন্সিগুলোর সঙ্গে ঠিক কী সমস্যা হয়েছিল।
৪. 📩 “লিড আসছে, কিন্তু সেল হচ্ছে না” সরাসরি দোষ আপনার
ধরুন আপনি ফেসবুক অ্যাড চালিয়ে ২০০টি লিড এনেছেন। কিন্তু ক্লায়েন্ট বলছেন, “সেল হয়নি, কাজের কিছু হয়নি।” এখানে ভুল হচ্ছে মার্কেটিং আর সেলসের ভিন্নতা বুঝতে না পারা।
একজন ক্লায়েন্টকে বোঝানো জরুরি আপনি লিড আনতে পারেন, কিন্তু সেই লিড ফলোআপ করা, কনভার্ট করা, ডেলিভারি দেওয়া এসব দায়িত্ব তার নিজের টিমের।
অনেক সময় দেখা যায়, লিড কনভার্ট হচ্ছে না কারণ –
- তারা কল রিসিভ করেননি
- ইনবক্সে সাড়া দেননি
- কাস্টমারের সাথে বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেননি
এমন দায় পুরোপুরি আপনার ঘাড়ে না নেয়ার জন্য শুরুতেই এই বিভাজন পরিষ্কার করে নিন।
৫. 💸 বাজেট সীমিত, কিন্তু প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া
আপনি যদি দেখেন ক্লায়েন্টের বাজেট মাত্র ৫ হাজার টাকা, কিন্তু তিনি চাচ্ছেন ১০০০ লিড, রিচ ১০ লাখ, আর ইনবক্সে ভিড়তাহলে সাবধান হোন।
কম বাজেটে “বড় রেজাল্ট” সম্ভব, কিন্তু সেটা এক্সপেরিমেন্টেশন, টাইমিং ও ক্রিয়েটিভের গুণমানের ওপর নির্ভর করে। বাজেট ও প্রত্যাশার মধ্যে গ্যাপ থাকলে, আপনি শতভাগ দিয়েও ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট রাখতে পারবেন না।
৬. 🕐 কাজের সময়ের বাইরে বারবার যোগাযোগ
রাত ১১টায় WhatsApp মেসেজ, শুক্রবার দুপুরে ৫ মিনিটে থাম্বনেইল চাওয়া—এটা কাজের মান ও টিম মোরাল, দুইয়েরই ক্ষতি করে।
আপনার উচিত কাজ শুরুর সময়েই কাজের সময়, কমিউনিকেশন চ্যানেল, রেসপন্স টাইম এগুলো স্পষ্ট করে দেওয়া।
৭. 🔢 শুধু লাইক/ফলোয়ার নিয়ে উদ্বিগ্ন
“পেজে ১ লাখ লাইক কেন নেই?”, “ইনস্টাগ্রামে ১০K না হলে কিছুই হয় না” এগুলো শুনলে আপনি বুঝবেন, ক্লায়েন্ট এখনো Vanity Metric নিয়ে ভাবছেন।
উদ্দেশ্য হচ্ছে:
- Website visit বাড়ানো
- Conversion বৃদ্ধি
- Lead cost কমানো
সোশ্যাল প্রুফ গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটা প্রাধান্য নয়।
🤝 আপনি যদি একজন ক্লায়েন্ট হন, এজেন্সি বাছার সময় এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন:
১. 🎯 কেউ গ্যারান্টি দিচ্ছে “১০০ লিড দিব” – একটু থামুন
কেউ যদি বলে “আমরা ৭ দিনে ১০০ লিড দিবো, নিশ্চিত”, তাহলে বুঝে নিন, হয় সে bluff করছে অথবা long-term result নিয়ে চিন্তা করছে না।
স্মার্ট এজেন্সি রোডম্যাপ দেয়, প্রজেকশন দেয়, কিন্তু গ্যারান্টি দেয় না।
২. 🧾 কোন পরিষ্কার অনবোর্ডিং প্রসেস নেই
আপনি জানেন না কে আপনার প্রজেক্ট হ্যান্ডেল করবে, কবে কী হবে, কী চাই সেটা জানায়নি—এই জগাখিচুড়ি এজেন্সি এড়িয়ে চলুন।
৩. 📉 রিপোর্টিং দেয় না, ফিডব্যাক নেয় না
এমন অনেক এজেন্সি আছে যারা রিপোর্ট তৈরি করে না, ডেটা বিশ্লেষণ করে না। ৩ মাস পরে ক্লায়েন্ট বলছেন “আমার লাভই তো হলো না!”
একটা ভালো এজেন্সি আপনাকে বলে—
- কী কাজ হয়েছে
- কী কাজ হয়নি
- পরবর্তী পদক্ষেপ কী
৪. 🧑💻 এক ব্যক্তিই সব কাজ করেন
একজন লোক যদি Facebook Ads চালান, আবার Instagram Design করেন, আবার Google SEO দেখেন তাহলে বুঝে নিন, এখানে কোনো টিম স্ট্রাকচার নেই।
এতে যে সমস্যা হয় তা হলো দায়িত্ব ঝুলে যায়, কাজের মান পড়ে যায়, আর একজন মানুষের বার্নআউট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
৫. 📜 Scope of Work (SOW) বা চুক্তিপত্র নেই
SOW ছাড়া এজেন্সির সাথে কাজ মানেই—“এটা আমাদের কাজ না” টাইপ কথা শুনতে হবে।
চুক্তিপত্র না থাকলে বাজেট বাড়াতে পারে, সময় বাড়াতে পারে, এমনকি কাজেই নাও লাগতে পারে।
একটা সফল ডিজিটাল মার্কেটিং পার্টনারশিপ গড়ে উঠে বিশ্বাস, স্পষ্টতা আর বাস্তব প্রত্যাশার ওপর।
কাজ শুরুর আগে Red Flag চিনে ফেলতে পারলে শুধু সমস্যাই এড়ানো যায় না, বরং সম্পর্কও হয় দীর্ঘস্থায়ী।
স্মার্ট পার্টনারশিপ মানে একে অপরের সময়, অভিজ্ঞতা এবং মেধার প্রতি সম্মান রাখা। তাই আপনি হোন ক্লায়েন্ট বা এজেন্সি চোখ খোলা রাখুন, ভুল মানুষদের এড়িয়ে চলুন, আর সঠিক সম্পর্ক গড়ুন।