অনেকেই বলেন, Google Ads-এ এত টাকা ঢালছি, কিন্তু কিছুই তো হচ্ছে না! আপনি হয়তো ভালো প্রোডাক্ট দিচ্ছেন, ওয়েবসাইটও সুন্দর, কিন্তু কাস্টমার আসছে না। দিনের পর দিন বিজ্ঞাপনে টাকা খরচ করেও যখন সেলস বা লিড আসে না, তখন হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু যদি বলি, এর জন্য হয়তো আপনি দায়ী নন? দায়ী হলো আপনার পুরনো মার্কেটিং কৌশল। কারণ Google আর আগের মতো নেই। সার্চ এবং বিজ্ঞাপনের পুরো খেলাটাই এখন Artificial Intelligence বা AI বদলে দিয়েছে। আর বেশিরভাগ মার্কেটার এবং বিজনেস ওনাররা এই পরিবর্তনটা বুঝতেই পারছেন না।
আজ আমরা জানব, Google-এর এই AI বিপ্লব আসলে কী এবং কীভাবে আপনি তিনটি শক্তিশালী AI-চালিত ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আপনার ব্যবসাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিতে পারেন, যা আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা হয়তো এখনো ব্যবহারই করছে না।

বদলে গেছে সার্চের ধরণ: মানুষ এখন গুগলের সাথে কথা বলে!
একটা সময় ছিল যখন মানুষজন শুধু Keyword দিয়ে সার্চ করত। যেমন: “Running shoes in Dhaka”। কিন্তু এখন, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম (Gen Z) গুগলের সাথে বন্ধুর মতো কথা বলে। তারা এখন সার্চ করে, “ঈদের ছুটিতে বন্ধুদের সাথে ঘোরার জন্য ঢাকার আশেপাশে ভালো কোনো রিসোর্ট আছে?” অথবা “গরমের জন্য আরামদায়ক কিন্তু স্টাইলিশ জুতা কোনটা হবে?”
Google-এর নতুন AI (Gemini) এখন শুধু Keyword মেলায় না, বরং আপনার প্রশ্নের পেছনের আসল উদ্দেশ্যটা (intent) বোঝার চেষ্টা করে।
আগে গুগল আপনার লোকেশন বা ডিভাইস দেখে রেজাল্ট দেখাতো। কিন্তু এখনকার AI একই সাথে একাধিক সার্চ করে, বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনার জন্য সেরা উত্তরটি তৈরি করে। এর মানে হলো, পুরনো Keyword-ভিত্তিক অ্যাডের দিন শেষ হতে চলেছে।
Google Ads-এর নতুন ৩টি AI অস্ত্র: যা আপনার ব্যবসাকে বদলে দেবে
এই নতুন AI যুগে সফল হতে গুগল তিনটি শক্তিশালী ক্যাম্পেইন সিস্টেম তৈরি করেছে। এগুলো হলো:
- Performance Max (PMax)
- Demand Gen
- AI Max for Search
এই তিনটি সিস্টেম একে অপরের সাথে কাজ করে একটি সম্পূর্ণ মার্কেটিং ইকোসিস্টেম তৈরি করে। চলুন, সহজ ভাষায় জেনে নিই এগুলো কীভাবে কাজ করে এবং বাংলাদেশি বিজনেসের জন্য এর মানে কী।

১. Performance Max (PMax): আপনার অলরাউন্ডার মার্কেটিং প্লেয়ার
Performance Max বা PMax হলো আপনার মার্কেটিং টিমের সেরা অলরাউন্ডার খেলোয়াড়ের মতো। আপনাকে শুধু কিছু ভালো মানের ছবি, ভিডিও, হেডলাইন এবং আপনার বিজনেসের লক্ষ্য (যেমন- সেলস বা লিড) ঠিক করে দিতে হবে। বাকি কাজটা AI নিজে থেকেই করে নেবে।
PMax যা যা করে:
আপনার অ্যাড Google-এর সব প্ল্যাটফর্মে (Search, YouTube, Gmail, Maps, Discover) দেখায়।
AI নিজে থেকেই নির্ধারণ করে কোন প্ল্যাটফর্মে, কোন সময়ে, কোন কাস্টমারকে আপনার অ্যাড দেখালে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট আসবে।
উদাহরণ: ধরুন, আপনি বাচ্চাদের জন্য একটি নতুন অর্গানিক বেবি ফুড ব্র্যান্ড (যেমন “Mummum”) বাজারে এনেছেন। আপনি PMax ক্যাম্পেইনে বাচ্চাদের হাসিমুখের ছবি, মা-বাবাদের পজিটিভ রিভিউ ভিডিও এবং কিছু আকর্ষণীয় অফার দিয়ে দিলেন। PMax তখন নিজে থেকেই সেইসব মা-বাবাদের খুঁজে বের করবে যারা ইউটিউবে প্যারেন্টিং টিপস দেখছে, গুগলে বেবি ফুডের তথ্য খুঁজছে বা জি-মেইলে বাচ্চাদের প্রোডাক্টের অফার চেক করছে।
একটি বিদেশি বেবি ফুড ব্র্যান্ড PMax ব্যবহার করে তাদের সেলস ৫৬% বাড়িয়েছে এবং কাস্টমার পাওয়ার খরচ (Cost Per Acquisition) ৬৯% কমিয়েছে!
২. Demand Gen: কাস্টমার খোঁজার আগেই ডিমান্ড তৈরি করুন
সাধারণত কাস্টমার যখন কোনো প্রোডাক্ট খোঁজে, তখন আমরা তাকে বিজ্ঞাপন দেখাই। কিন্তু Demand Gen ক্যাম্পেইন এর এক ধাপ আগে কাজ করে এটি কাস্টমারের মনে আপনার প্রোডাক্টের জন্য ডিমান্ড বা চাহিদা তৈরি করে।
এটা কীভাবে কাজ করে?
Demand Gen মূলত YouTube, YouTube Shorts, Discover এবং Gmail-এর মতো প্ল্যাটফর্মে কাজ করে। AI ইউজারের আচরণ বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারে ভবিষ্যতে তার কী প্রয়োজন হতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আপনার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখায়।
উদাহরণ: একজন ব্যক্তি ইউটিউবে নিয়মিত শরীরচর্চার ভিডিও দেখছে। সে এখনো নতুন জুতা কেনার কথা ভাবেনি। Demand Gen ক্যাম্পেইন তাকে ঠিক সেই সময়েই আপনার ব্র্যান্ডের (যেমন- Apex বা Bata) রানিং শু-এর একটি আকর্ষণীয় ভিডিও অ্যাড দেখাতে পারে। এর ফলে তার মনে নতুন জুতা কেনার ইচ্ছা তৈরি হতে পারে।
Samsung তাদের নতুন টিভির জন্য এই ক্যাম্পেইন ব্যবহার করে ৪০০% বেশি Click-through Rate (CTR) পেয়েছে, তাও ৭০% কম খরচে!
৩. AI Max for Search: আপনার পুরনো ক্যাম্পেইনের সুপারচার্জার
আপনার যদি আগে থেকেই সফল Search Campaign চলে, তাহলে AI Max for Search সেটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এটি আপনার পুরনো ক্যাম্পেইনের ডেটা (Keywords, Ads, Landing Pages) বিশ্লেষণ করে নতুন নতুন অডিয়েন্স এবং সার্চ কোয়েরি খুঁজে বের করে যা আপনি হয়তো নিজে কখনও খুঁজে পেতেন না।
এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
AI মানুষের ভাষা ও আঞ্চলিক slang ভালোভাবে বোঝে। যেমন, কেউ হয়তো সার্চ করল “সেরা ইন্টারনেট প্যাকেজ,” আবার কেউ সার্চ করল “কোন সিমের নেট সবচেয়ে ফাস্ট?”। AI Max এই দুটি ভিন্ন সার্চের পেছনের একই উদ্দেশ্য বুঝতে পারে এবং আপনার অ্যাড দেখাতে পারে।
উদাহরণ: বাংলাদেশের একটি বড় টেলিকম কোম্পানি, যেমন Grameenphone বা Robi, তাদের পোস্টপেইড প্যাকেজের জন্য AI Max ব্যবহার করে দেখতে পেল যে অনেক ইউজার এমন সব প্রশ্ন করছে যা তারা আগে টার্গেট করেনি। এর ফলে তারা ২০৭% বেশি কনভার্সন পেয়েছে।
সবকিছু একসাথে: The Compound Effect (চক্রবৃদ্ধি প্রভাব)
এই তিনটি AI সিস্টেম আলাদাভাবে শক্তিশালী, কিন্তু একসাথে কাজ করলে এদের কার্যকারিতা বহুগুণ বেড়ে যায়। একে বলা হয় “Compound Effect”।
Demand Gen: কাস্টমারের মনে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করে।
Performance Max: সেই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাদের সামনে বারবার আপনার ব্র্যান্ডকে নিয়ে আসে।
AI Max for Search: যখন কাস্টমার কেনার জন্য প্রস্তুত হয়ে সার্চ করে, তখন সঠিক সময়ে আপনার অ্যাডটি তার সামনে হাজির করে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটি একটি চক্রের মতো কাজ করে, যেখানে প্রতিটি ক্যাম্পেইন অন্য ক্যাম্পেইনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। আপনার অর্গানিক SEO কন্টেন্ট AI-কে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয়, যা অ্যাডের পারফর্ম্যান্স বাড়াতে সাহায্য করে।

তাহলে আপনার বিজনেসের জন্য করণীয় কী?
পুরো বিষয়টি হয়তো জটিল মনে হচ্ছে, কিন্তু শুরুটা বেশ সহজ।
যদি আপনার বাজেট কম থাকে: শুধু Performance Max দিয়ে শুরু করুন। ভালো ছবি ও ভিডিও দিন এবং AI-এর উপর ভরসা রাখুন।
যদি আপনার আগে থেকেই Search Ads চলে,আপনার ক্যাম্পেইনে AI Max চালু করে দিন। এটি আপনার বর্তমান পারফর্ম্যান্সকে আরও উন্নত করবে।
যদি আপনার বাজেট বেশি থাকে: তিনটি সিস্টেমকেই একসাথে ব্যবহার করুন। Demand Gen দিয়ে নতুন অডিয়েন্স তৈরি করুন, PMax দিয়ে তাদের সাথে কানেক্টেড থাকুন এবং Search Ads দিয়ে ফাইনাল সেলস সম্পন্ন করুন।
Google-এর AI এখন আর কোনো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নয়, এটা বর্তমান। যারা যত দ্রুত এই পরিবর্তনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে, তারাই ডিজিটাল মার্কেটিং-এর এই নতুন যুগে টিকে থাকবে এবং সফল হবে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি কি পুরনো পদ্ধতিতে টাকা নষ্ট করবেন, নাকি AI-এর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন?





